বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৩:০৯ অপরাহ্ন

আইন না মেনে বিদেশি জাহাজে বিপিসির তেল

আইন না মেনে বিদেশি জাহাজে বিপিসির তেল

স্বদেশ ডেস্ক:

সরকারি জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জাহাজে পরিবহনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ব্যত্যয় ঘটলে রয়েছে শাস্তির বিধান। এটিকে আরও শক্তিশালী করেছে ২০১৯ সালের বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের স্বার্থসুরক্ষা আইন; কিন্তু আইনকে পাশ কাটিয়ে বিদেশি একটি জাহাজে ৩৫ হাজার টন ডিজেল আনা হচ্ছে। এতে আপত্তি জানিয়ে নৌ বাণিজ্য দপ্তরকে (এমএমও) চিঠি দেয় বিএসসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তেল পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে এমএমও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তেল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজটি এলে খালাসে জটিলতা তৈরি হতে পারে। এতে দেশের অতিগুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি নিরাপত্তা নিঘ্নিতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিএসসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ থেকে ২০১৯ সালে ছয়টি নতুন জাহাজ যুক্ত হয়। এর মধ্যে তিনটি অয়েল ট্যাংকার। বিপিসি বছরে ৪০ লাখ টন পরিশোধিত তেল আমদানি করে; কিন্তু আইনের বিধান ও সরকারি নির্দেশনা না মানায় গত তিন বছর সরকারি তেল পরিবহন করতে পারেনি বিএসসির এই তিন জাহাজ। জাহাজগুলো বহরে যুক্ত হওয়ার আগে ২০১৭ সালের ৪ জুন অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্তে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন হয়েছিল। কমিটি কোনো প্রতিবেদন না দেওয়ায় বিএসসি নতুন জাহাজগুলো তিন বছর মেয়াদের চুক্তিতে ভাড়ায় নিয়োজিত করে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ফেরত আসা শুরু হয়েছে। আগামী এপ্রিলের মধ্যে বিএসসির বহরে সবকটি জাহাজ ফেরত আসবে।

সূত্র জানায়, সরকারি অর্থে কেনা জ্বালানি বিএসসির মাধ্যমে পরিবহন সংক্রান্ত গত বছরের ১৬ নভেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সরকারি দুই প্রতিষ্ঠানের মতভেদ চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে ৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর কমিটি সভা আহ্বান করে আগেরদিন ২২ ডিসেম্বর সেটি স্থগিত করে।

এর পর ২৩ ডিসেম্বর এমটি বাংলার অগ্রযাত্রা জাহাজের বাণিজ্যিক নিয়োগ ও কার্গো লিফটিং শিডিউল অবহিতকরণে বিপিসি মহাব্যবস্থাপক বরাবর চিঠি দেয় বিএসসি। ওই চিঠির কোনো উত্তর না পেয়ে ২৮ নভেম্বর আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে, বিএসসির জাহাজে তেল পরিবহন না করলে জ্বালানি পণ্য পরিবহনে উদ্ভূত জটিলতার দায়ভার এককভাবে বিপিসির ওপর বর্তাবে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ (স্বার্থরক্ষা) আইন অনুযায়ী পণ্য লোডিং বন্দরের আশপাশের বন্দরে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ থাকলে বিদেশি জাহাজে পণ্য পরিবহন করা যাবে না। একই সঙ্গে পণ্য লোডের ১৫ দিন আগে ওয়েবার সনদ (বিদেশি জাহাজে পণ্য পরিবহনে অনাপত্তিপত্র) নিতে হয়। আগামী ৩ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলার অগ্রযাত্রা জাহাজটি সিঙ্গাপুর বন্দরে পণ্য নিতে অপেক্ষা থাকবে বলে জানানো হলেও আমলে নেয়নি বিপিসি।

অভিযোগ ওঠেছে, বিএসসি ও নৌ বাণিজ্য দপ্তরের অনুমতি ছাড়াই ২৩ জানুয়ারি এমটি গ্র্যান্ড আইস-১২ জাহাজে ৩৫ হাজার টন ডিজেল লোড করে। বিষয়টি জানতে পেরে বিএসসি নৌ বাণিজ্য দপ্তরে আপত্তি জানালে ২৪ ডিসেম্বর ওয়েবার সনদের আবেদন করে জাহাজের শিপিং এজেন্ট। আইন অমান্য করে পণ্য লোড করায় মেরিনার্স ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম কোং লিমিটেডকে কারণ দর্শায় এমএমও। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অপারেশন মেহেদী এইচ খান আমাদের সময়কে বলেন, বিপিসি আদেশ অনুযায়ী আমরা পণ্য নিয়েছি। আইনি বিষয়ে বিসিপি ফেস করবে। তবে বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন) মোস্তফা কুদরুত-ই-ইলাহি বলছেন, এখানে বিপিসির কিছু করার নেই। শিপিং কোম্পানি পুরো বিষয়টি দেখবে।

বিএসসির নির্বাহী পরিচালক বাণিজ্য ড. পীযূষ দত্ত বলেন, এখন আমাদের আর করার কিছু নেই। আমরা আপত্তি জানিয়েছি। আইন অনুযায়ী নৌ বাণিজ্য দপ্তর ব্যবস্থা নেবে।

নৌ বাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন আহমেদ জানান, কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হলে আইন অনুযায়ী জরিমানা করা হবে। আইনে জাহাজ ভাড়ার সমপরিমান জরিমানার বিধান রয়েছে।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশের জ্বালানি ও সার পরিবহনের জন্য সিএসসি প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখন থেকে বিএসসির জাহাজের মাধ্যমেই পরিবাহিত হচ্ছিল। এক সময় বিএসসির বহরে ৩৮টি জাহাজ থাকলেও কমতে কমতে পাঁচটিতে ঠেকে। ফলে সিএসসির অনুমতি নিয়ে বিদেশি জাহাজের মাধ্যমে জ্বালানি ও সার পরিবহন হচ্ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতার আসার পর পুনরায় বিএসসির বহরে জাহাজ বাড়ানোর উদ্যোগ নিলে ৬টি জাহাজ বহরে যুক্ত হয়। বর্তমানে বিএসসির বহরে মোট আটটি জাহাজ রয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877